আগে সংসদ পরে স্থানীয় নির্বাচন চায় বিএনপি
- আপলোড সময় : ০৯-০১-২০২৫ ০৮:২৯:৫১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০১-২০২৫ ০৮:২৯:৫১ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না বিএনপি। দলটি মনে করে, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে জন-আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে এখন সরকারের উচিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে ফোকাস করা। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি বলছে, এই ঘোষণাপত্রে গণতন্ত্রের জন্য বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বিগত ১৬ বছরের লড়াই-সংগ্রাম ও ত্যাগের উল্লেখ নেই। তাই সরকারি উদ্যোগের ডিক্লারেশনে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিতে এখন থেকে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটির নেতারা এমন মনোভাব প্রকাশ করেছেন। রাত পৌনে ৯টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। সেখানে কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ জানান, জাতীয় পর্যায়ে সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও ঢাকার বাইরে মানুষের মতামতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও এ মতামত আছে। এর আগে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একাধিক মতবিনিময়েও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার বিষয়ে পরামর্শ উঠে এসেছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান না বলে মত দেন। তারা বলেন, এ ধরনের সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার নজির নেই। সরকারের উচিত, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দেওয়া। সরকারকে কোনো চাপ কিংবা কোনো পক্ষ বা কারোর স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে জনস্বার্থে দেশকে নির্বাচনমুখী করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
বৈঠক সূত্রগুলো বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, এই ঘোষণাপত্রে তাদের বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের স্বীকৃতি থাকতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে এ সময় তাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। বিএনপির গত ১৬ বছরের আন্দোলনের পটভূমিতে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে। সুতরাং এই গণ-অভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফল নয়। এমন প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্রে গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির ১৬ বছরের সংগ্রাম-ত্যাগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিতে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। শিগগিরই এ নিয়ে সভা-সেমিনার করে নির্যাতন-নিপীড়ন, ত্যাগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া আগামীতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে সেখানে এ বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরবে বিএনপি।
গত ৩১ ডিসেম্বর ছাত্রদের ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার উদ্যোগ এবং শেষ মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ঐকমত্যে এই ঘোষণাপত্র তৈরির ঘোষণায় তা স্থগিত করা হয়। ডিক্লারেশন প্রশ্নে ছাত্র এবং সরকারের এই অবস্থান বিএনপির কাছে স্পষ্ট নয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এই ইস্যুতে সরকার যখন আলোচনার উদ্যোগ নেবে, তখন বিষয়টি তুলে ধরবে বিএনপি।
দেশে ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে গত ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অভিমত দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নেতারা মত দেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর। এটা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। তবে এমনটা করলে তাতে জটিলতা বাড়বে, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কালক্ষেপণ হবে। সুতরাং ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছরই থাকা উচিত।
প্রধান উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পরদিন রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভোটারের বয়স ১৮ বছর তো আছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যদি কমাতে চান, সেটা নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করুক। এভাবে না বলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়টা আনা উচিত ছিল, এটা ভালো হতো। তাহলে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে, কালক্ষেপণ হবে। মানুষের মনে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।
জানা যায়, ছাত্রদের জুলাই ঘোষণাপত্রের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাহাত্তরের সংবিধানকে বাতিল করা। এ ক্ষেত্রে বিএনপির আপত্তি রয়েছে, সংবিধানের বাইরে গেলে দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে। তা ছাড়া ছাত্ররা যে সংবিধান বাতিল করে দেওয়ার কথা বলছে, সেই বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনসহ রাষ্ট্রের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ এই সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রের কাঠামোগত একটা অবস্থান আছে। সুতরাং যারা এটা বাতিলের কথা বলছে, তাদের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ এসেছে বৈঠকে। বিএনপি মনে করে, সংবিধান কখনো কবর দেওয়া যায় না, বরং পরিবর্ধন, পরিমার্জন বা সংশোধন হতে পারে, সেটাই হবে সর্বোত্তম পন্থা।
এদিকে সরকার বিজয় দিবসে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমার ব্যাপারে একটা ধারণা দিলেও এখনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেয়নি। এর পেছনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপ থাকতে পারে বলেও বৈঠকে কেউ কেউ অভিমত দেন। তারা বলেন, ছাত্ররা সরকারি সহযোগিতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। সেই দলকে সংগঠিত করা এবং সারা দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত করতে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে এবং জনগণের পালস বুঝে সরকারকে রোডম্যাপ দিয়ে লক্ষ্য স্থির করে সামনের দিকে এগোনো দরকার। কারণ, দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই। নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, সংকটও তত বাড়বে।
বৈঠকে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়, চিকিৎসা শেষে বেগম খালেদা জিয়া দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ